শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন

আপডেট
বাড়তি খরচে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

বাড়তি খরচে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা
উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে জেলাজুড়ে চলছে বোরো ধান আবাদের ভরা মৌসুম। ইতোমধ্যে পরিচর্যাসহ সার-কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত কৃষকরা। তবে এবছরে বাড়তি খরচে নাভিশ্বাস করে ফেলছে তাদের। অর্থ সংকট আর খরচের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষকদের কপালে পড়ছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলার বোরো আবাদে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বাড়তি খরচের হিসাব গুণছেন তারা। সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকদের কাঙ্খিত বোরো আবাদের চিত্র। চারদিকে এখন গাঢ় সবুজের বিপ্লব। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ বছর রয়েছে মলিন মুখে। বীজ, বিদ্যুত, ডিজেল, কিটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তারা। চাষাবাদের খরচ জোগাতে অনেকেই ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দরিদ্র কৃষকরা। কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের জন্য পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে জমি চাষ দিতে হয়।

ডিজেলের দাম বেড়ে প্রতি লিটার ১১২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের দামও। বর্তমানে প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার ১১শ থেকে ১২শ টাকা, টিএসপি ১১শ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা, দস্তা প্রতিকেজি ২শ থেকে ৩শ টাকা। পোকা দমনে কীটনাশক ছহি ১০০ মিলি ১৪৫ টাকা, ভিরতাকো ১০ গ্রাম ১৭০ টাকা, মাইকোসাল প্রতিকেজি ২০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। গত বছর এসব পণ্যের দাম কম ছিল অনেকটা। এর আগে প্রতিকেজি বীজ ২২০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনেছেন কৃষকরা। এছাড়া রোপনের সময় এবং বর্তমান পরিচর্যায় শ্রমিকের মজুরী ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে কাটা-মাড়াইয়ের সময় শ্রমিক সংকটে দেখা দিলে তাদের মজুরী গুণতে হবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সসম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ বছরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ চালিত গভীর সেচযন্ত্র ২৩৯ টি, অগভীর ৩ হাজার ৫০টি, ডিজেল চালিত অগভীর ২ হাজার ৯৩২ টি, এলএলপি বিদ্যুৎ ১৭ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৩টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কৃষক সিদ্দিক আলী জানান, গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের বাড়তি খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

গত বছরে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি ভাড়া দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছর বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুতের দামই নয়, সম্প্রতি বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের দামও বেড়েছে অনেক। সবমিলে এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আবার প্রাকৃতি দুর্যোগের প্রভাব পড়লে তো পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। গাইবান্ধার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রাপ্ত কৃষক আমির হোসেন বলেন, আগের মৌসুমে কেনা ৬৬ টাকার ডিজেল বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১১২ টাকা পাইকারী দরে। আবহাওয়ার কারণে ১ বিঘা ধানের জমিতে সেচ দিতে কখনো ৩২ লিটার কখনো ৪৫-৫০ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়। তাই অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে উৎপাদনে। সে তুলনায় আমরা লাভবান হচ্ছি না। বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক জামাত আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে প্রতিবিঘা ১ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২ হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করেছি।

কিন্তু এখনও বিদ্যুতের নতুন বিল হাতে পাওয়া যায়নি। কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের মিয়া বলেন, সম্প্রতি সময়ে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরের দাম কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব কৃষি ¶েত্রেও পড়বে। সেচ কাজে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়বে। তবে তাদের লোকসান হবে না। এছাড়া সরকারের প¶ থেকে ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে লাভবান হবেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |